লেখাঃ রিয়াদ বিন ইসলাম
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের অপসারণ, যা সংক্ষেপে ব্রেক্সিট (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তথা এক্সিট বোঝাতে ব্রেক্সিট শব্দটি ব্যবহার করা হয়) নামে পরিচিত।
ব্রিটেন ১৯৭৩ সালে ইউরোপিয়ান ইকোনমিক কমিউনিটির সঙ্গে সংযুক্ত হয়। এর লক্ষ্য ছিল সুলভ মূল্যে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য ও অভিন্ন বাজারসুবিধা। ১৯৯৩ সালে ইইউ নিজস্ব মুদ্রা, নীতিমালা, নাগরিকদের জন্য সীমানামুক্ত বিচরণসহ যুক্ত করাসহ অনেকগুলো পরিবর্তন আনে। কিন্তু অনেক ব্রিটিশ নাগরিক ব্রিটেনের ইইউ'র বিধি-নিষেধ মেনে চলা নিয়ে বেশ নাখোশ।
তাই ইইউ থেকে ব্রিটিশ জনগণের থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বা ব্রেক্সিট নিয়ে ৪০ বছরের বেশি সময় ইউনিয়নের সঙ্গে থাকার পর ২০১৬ সালের জুনে একটি গণভোট নিয়েছিল যুক্তরাজ্য, যেখানে ভোটাররা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে ভোট দেন।
কিন্তু সেই ভোটের ফলাফলের সঙ্গে সঙ্গেই ব্রেক্সিট হয়ে যায়নি। এই বিচ্ছেদ ঘটবে ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ তারিখে।
পটভূমিঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ইউরোপে যখন জাতিতে জাতিতে অবিশ্বাস আর সন্দেহের দোলাচল, সেই সময় ১৯৪৬ সালে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিখ্যাত বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘ইউরোপে আমাদের একধরনের যুক্ত ইউরোপীয় রাষ্ট্র গড়ে তোলার চেষ্টা করা প্রয়োজন। ফ্রান্স ও জার্মানি এ ধরনের জোটের দায়িত্ব নিতে পারে।’ তবে তিনি নিজেদের ব্রিটিশ এম্পায়ার অব ইউনাইটেড স্টেট হিসেবে দেখতেই বেশি পছন্দ করেছিলেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের অপসারণ, যা সংক্ষেপে ব্রেক্সিট (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তথা এক্সিট বোঝাতে ব্রেক্সিট শব্দটি ব্যবহার করা হয়) নামে পরিচিত।
ব্রিটেন ১৯৭৩ সালে ইউরোপিয়ান ইকোনমিক কমিউনিটির সঙ্গে সংযুক্ত হয়। এর লক্ষ্য ছিল সুলভ মূল্যে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য ও অভিন্ন বাজারসুবিধা। ১৯৯৩ সালে ইইউ নিজস্ব মুদ্রা, নীতিমালা, নাগরিকদের জন্য সীমানামুক্ত বিচরণসহ যুক্ত করাসহ অনেকগুলো পরিবর্তন আনে। কিন্তু অনেক ব্রিটিশ নাগরিক ব্রিটেনের ইইউ'র বিধি-নিষেধ মেনে চলা নিয়ে বেশ নাখোশ।
তাই ইইউ থেকে ব্রিটিশ জনগণের থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বা ব্রেক্সিট নিয়ে ৪০ বছরের বেশি সময় ইউনিয়নের সঙ্গে থাকার পর ২০১৬ সালের জুনে একটি গণভোট নিয়েছিল যুক্তরাজ্য, যেখানে ভোটাররা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে ভোট দেন।
কিন্তু সেই ভোটের ফলাফলের সঙ্গে সঙ্গেই ব্রেক্সিট হয়ে যায়নি। এই বিচ্ছেদ ঘটবে ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ তারিখে।
পটভূমিঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ইউরোপে যখন জাতিতে জাতিতে অবিশ্বাস আর সন্দেহের দোলাচল, সেই সময় ১৯৪৬ সালে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিখ্যাত বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘ইউরোপে আমাদের একধরনের যুক্ত ইউরোপীয় রাষ্ট্র গড়ে তোলার চেষ্টা করা প্রয়োজন। ফ্রান্স ও জার্মানি এ ধরনের জোটের দায়িত্ব নিতে পারে।’ তবে তিনি নিজেদের ব্রিটিশ এম্পায়ার অব ইউনাইটেড স্টেট হিসেবে দেখতেই বেশি পছন্দ করেছিলেন।
১৯৭৩ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের নেতৃত্বে ব্রিটিশ সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দিলেও অনেক রক্ষণশীল এবং লেবার-দলীয় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বা তাঁদের সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নকে মনে-প্রাণে গ্রহণ করতে পারেনি। জোটে ইউরোপীয় মুদ্রাব্যবস্থা এবং ভিসা প্রথায়ও তাঁরা নিজেদের যুক্ত করেননি, কিন্তু ইউরোপীয় একক বাজারব্যবস্থার সুফল ভোগ করেছেন। যুক্তরাজ্য শুধু এই জোটের বন্ধু ও সমর্থক হিসেবে নয়, ইউরোপীয় রাজনীতিতে নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে জোটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। জোটের মধ্যে ব্রিটিশদের ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ আচরণে বিরক্ত হয়ে ১৯৮৩ সালে ফরাসি প্রেসিডেন্ট শার্ল দ্য গল বলেছিলেন, ‘ব্রিটিশরা আদতে ইউরোপে শুধু একটি দ্বীপরাষ্ট্র।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার কারণে যুক্তরাজ্যের কী ক্ষতি বা লাভ হচ্ছিল, এই বিষয়গুলো এখন আবার সামনে আসছে। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ব্যাংক খাতে যুক্তরাজ্যের দৈন্যদশা নিয়ে এখন আলোচনা হচ্ছে। পুঁজি আর অর্থনৈতিক লাভের হিস্যা নিয়ে হঠাৎ আবেগতাড়িত হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে যাওয়া বিষয়ে খোদ যুক্তরাজ্যে প্রচুর সমালোচনা হচ্ছে।
এতে বলা হয়েছে, অংশীদারত্ব থেকে সরে আসতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে কী পরিমাণ অর্থ দিতে হবে ব্রিটেনকে। বিচ্ছেদের আগে বিভিন্ন সময় সম্মত হওয়া আর্থিক এ দায় তিন হাজার ৯০০ কোটি পাউন্ডের মতো হবে।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাস করা ব্রিটিশ নাগরিকদের ভাগ্যে কী ঘটবে। পাশাপাশি ব্রিটেনে বাস করা অন্য ইউরোপীয় দেশের নাগরিকদের কী হবে- চুক্তিতে তাও বলা হয়েছে। এতে ব্রিটেনে বাস করা ইউরোপীয় নাগরিক ও ইউরোপে ছড়িয়ে থাকা ব্রিটিশ নাগরিকদের সুরক্ষা ও অবাধ চলাচলে ইতি ঘটবে।
যুক্তরাজ্যে অভিবাসীদের আধিক্য দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে এ নিয়ে ব্রিটিশ নাগরিকদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি রয়েছে। ইইউ'র নিয়ম অণুযায়ী ইইউভুক্ত ২৮টি দেশের নাগরিক ভিসা ছাড়াই এক দেশ থেকে আরেক দেশে প্রবেশ করার অধিকার রাখে। আর সে কারণে ডেভিড ক্যামেরন সরকার তার প্রথম মেয়াদে ইইউ'র বাইরের দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনতে সক্ষম হলেও ইইউভুক্ত নাগরিকদের প্রবেশ ঠেকাতে পারেনি। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দ্বিতীয় মেয়াদে ইইউভুক্ত দেশের নাগরিকদের যুক্তরাজ্যে প্রবেশ নিরুৎসাহিত করতে চার বছরের জন্য সুবিধা ভাতা বন্ধ রাখার প্রস্তাব দেন ক্যামেরন। এতে খুশি হতে পারেননি ইইউভুক্ত দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। তারা সদস্য দেশের নাগরিকদের সুবিধা ভাতা প্রদানে বৈষম্য করা হলে তা হবে ইইউর প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক হবে বলে দাবি তোলেন। আর এ কারণেই যুক্তরাজ্যকে ইইউতে রাখা না রাখার ব্যাপারে প্রশ্ন তৈরি হয়।
ব্রেক্সিট প্রশ্নে ইইউভুক্ত নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়ে অভিবাসীদের সুবিধা সীমিত করাসহ চারটি সংস্কার প্রস্তাব দেন ক্যামেরন এবং পরবর্তীতে সে প্রস্তাব নিয়ে ক্যামেরনের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছান ইইউ নেতারা। ইইউ’র সঙ্গে সমঝোতার পর দেশে ফিরে ব্রেক্সিটের জন্য গণভোটের তারিখ ঘোষণা করেন ক্যামেরন এবং ২০১৬ সালের ২৩ জুন গণভোটে অণুষ্ঠিত হয়। ব্রিটেনের ইইউতে থাকা না থাকার প্রশ্নে দেশটির জনগণই ঐ গণভোটে চূড়ান্ত রায় দেন।
ভোটের ফলাফলঃ
ইইউতে যুক্তরাজ্যের থাকার বিপক্ষে ৫২ শতাংশ ও পক্ষে ৪৮ শতাংশ ভোট পড়ে। ইইউতে থাকার পক্ষে লন্ডন ও স্কটল্যান্ড শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছে। এই দুই অঞ্চলে ৬০ শতাংশের বেশি ভোট ইউরোপের পক্ষে। তবে ইংল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে ইইউতে থাকার বিপক্ষে ভোট বেশি পড়েছে। এই গণভোটে ব্যাপক হারে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। এমনকি ব্রিটেনের ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনেও এত ভোট পড়েনি।
গণভোটে ইইউ এর সাথে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদের রায় পাওয়ার পর একই বছরের ২৪ জুন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন ডেভিড ক্যামেরুন। ক্যামেরুনের পদত্যাগের পর যুক্তরাজ্যের ৭৬তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন টেরেসা মে।
গণভোটে ইইউ এর সাথে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদের রায় পাওয়ার পর একই বছরের ২৪ জুন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন ডেভিড ক্যামেরুন। ক্যামেরুনের পদত্যাগের পর যুক্তরাজ্যের ৭৬তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন টেরেসা মে।
ব্রেক্সিট চুক্তিঃ
ব্রেক্সিট নিয়ে ভোটাভুটির পর, প্রক্রিয়া নিয়ে যুক্তরাজ্য আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়।
এই আলোচনার বিষয়, কী শর্তে বিচ্ছেদ হবে। এটা হচ্ছে বেরিয়ে আসার সমঝোতা যেখানে নির্ধারণ করা হবে, যে কী কী শর্তে ব্রিটেন ব্রেক্সিট থেকে বেরিয়ে আসবে। ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পরে কি ঘটবে, তা আলোচ্য বিষয় নয়।
গত বুধবার এই বিচ্ছেদের বিষয়ে খসড়া চুক্তি তুলে ধরেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। এখানে তার মূল বিষয়গুলো:
ব্রেক্সিট নিয়ে ভোটাভুটির পর, প্রক্রিয়া নিয়ে যুক্তরাজ্য আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়।
এই আলোচনার বিষয়, কী শর্তে বিচ্ছেদ হবে। এটা হচ্ছে বেরিয়ে আসার সমঝোতা যেখানে নির্ধারণ করা হবে, যে কী কী শর্তে ব্রিটেন ব্রেক্সিট থেকে বেরিয়ে আসবে। ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পরে কি ঘটবে, তা আলোচ্য বিষয় নয়।
গত বুধবার এই বিচ্ছেদের বিষয়ে খসড়া চুক্তি তুলে ধরেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। এখানে তার মূল বিষয়গুলো:
অর্থকড়ি: ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেনা চুকাতে যুক্তরাজ্য ৩৯ বিলিয়ন পাউন্ড দিবে।
সময়সীমা: ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ থেকে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এই সময়ের মধ্যে যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যিক বিষয় ঠিক করে নেবে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মানিয়ে নেবে।
অভিবাসন: ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকরা এবং তাদের পরিবার মুক্তভাবে যুক্তরাজ্যে আসতে পারবেন।
সময়সীমা: ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ থেকে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এই সময়ের মধ্যে যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যিক বিষয় ঠিক করে নেবে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মানিয়ে নেবে।
অভিবাসন: ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকরা এবং তাদের পরিবার মুক্তভাবে যুক্তরাজ্যে আসতে পারবেন।
বাণিজ্য: অন্তর্বর্তী সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন হবে না।
উত্তর আয়ারল্যান্ড: ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা যুক্তরাজ্য, কেউ চায় না উত্তর আয়ারল্যান্ড আর রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ডের মাঝে কোন কড়া সীমান্ত থাকুক। তাই দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে, ব্রেক্সিট নিয়ে বোঝাপড়ায় যাই ঘটুক না কেন, এখানে সীমান্ত উন্মুক্ত থাকবে।
উত্তর আয়ারল্যান্ড ও রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ডঃ
পুরো ব্রেক্সিট আলোচনার মধ্যে এটা দুই পক্ষের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কোন পক্ষই চায় না, উত্তর আয়ারল্যান্ড ও রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ডের মাঝে প্রহরী চৌকি, তল্লাশি ঘটুক।
সুতরাং তারা একটি 'ব্যাকস্টপে' সম্মত হয়েছে, যার মানে এই দুইটি দেশের মাঝে কখনোই কড়াকড়ি সীমান্ত থাকবে না।
এর মানে পুরো যুক্তরাজ্যে না হলেও উত্তর আয়ারল্যান্ডে খাবার, পণ্যের মানে কিছু ইইউ রীতিনীতি অব্যাহত থাকবে।
এই পদ্ধতি শুধুমাত্র তখনি কার্যকর হবে, যদি ইইউ আর যুক্তরাজ্যের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সময়েও কোন বাণিজ্য চুক্তি না হয়।
কিন্তু বিষয়টি বিতর্কিত। অনেকে হয়তো বলবেন, এর ফলে যুক্তরাজ্যকে এখনো ইইউ আইনের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। আবার উত্তর আয়ারল্যান্ডের ক্ষেত্রে আলাদা বিধিবিধান থাকবে, এটাও অনেকে পছন্দ করছেন না।
প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে'র ব্রেক্সিট চুক্তিটি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হলো না কেন?
তার নিজের রক্ষণশীল দলেরই ১১৮ জন এমপি এর বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। বিশাল ব্যবধানে, ৪৩২-২০২ ভোটে - প্রস্তাবটি পরাজিত হয়েছে, যা বিস্মিত করেছে সবাইকে।
কেন এমন হলো? এর পেছনে করেছে বহু রকমের কারণ, যা বেশ জটিল।
উত্তর আয়ারল্যান্ড: ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা যুক্তরাজ্য, কেউ চায় না উত্তর আয়ারল্যান্ড আর রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ডের মাঝে কোন কড়া সীমান্ত থাকুক। তাই দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে, ব্রেক্সিট নিয়ে বোঝাপড়ায় যাই ঘটুক না কেন, এখানে সীমান্ত উন্মুক্ত থাকবে।
উত্তর আয়ারল্যান্ড ও রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ডঃ
পুরো ব্রেক্সিট আলোচনার মধ্যে এটা দুই পক্ষের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কোন পক্ষই চায় না, উত্তর আয়ারল্যান্ড ও রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ডের মাঝে প্রহরী চৌকি, তল্লাশি ঘটুক।
সুতরাং তারা একটি 'ব্যাকস্টপে' সম্মত হয়েছে, যার মানে এই দুইটি দেশের মাঝে কখনোই কড়াকড়ি সীমান্ত থাকবে না।
এর মানে পুরো যুক্তরাজ্যে না হলেও উত্তর আয়ারল্যান্ডে খাবার, পণ্যের মানে কিছু ইইউ রীতিনীতি অব্যাহত থাকবে।
এই পদ্ধতি শুধুমাত্র তখনি কার্যকর হবে, যদি ইইউ আর যুক্তরাজ্যের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সময়েও কোন বাণিজ্য চুক্তি না হয়।
কিন্তু বিষয়টি বিতর্কিত। অনেকে হয়তো বলবেন, এর ফলে যুক্তরাজ্যকে এখনো ইইউ আইনের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। আবার উত্তর আয়ারল্যান্ডের ক্ষেত্রে আলাদা বিধিবিধান থাকবে, এটাও অনেকে পছন্দ করছেন না।
প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে'র ব্রেক্সিট চুক্তিটি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হলো না কেন?
তার নিজের রক্ষণশীল দলেরই ১১৮ জন এমপি এর বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। বিশাল ব্যবধানে, ৪৩২-২০২ ভোটে - প্রস্তাবটি পরাজিত হয়েছে, যা বিস্মিত করেছে সবাইকে।
কেন এমন হলো? এর পেছনে করেছে বহু রকমের কারণ, যা বেশ জটিল।
প্রথম কথা : ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে কোন সীমান্ত চৌকি, দেয়াল বা বেড়া - এসব কিছুই নেই। এক দেশের লোক অবাধে যখন-যেভাবে খুশি আরেক দেশে যেতে পারে, অন্য দেশে গিয়ে কাজ করতে পারে।
কিন্তু ব্রিটেন যদি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে তো ব্রিটেন অন্য দেশ হয়ে গেল। ফ্রি মুভমেন্ট অব পিপল - যা ইইউএর মূল নীতির অন্যতম স্তম্ভ - তা আর তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না, এবং সেক্ষেত্রে ব্রিটেন ও ইইউ-র মধ্যে সীমান্ত ফাঁড়ি থাকতে হবে। এক দেশের লোক বা পণ্য আরেক দেশে যেতে হলে কাস্টমস চেকিং পার হতে হবে।
কিন্তু ব্রিটেন হলো একটা দ্বীপপুঞ্জ। ইউরোপ ও ব্রিটেনের মধ্যে আছে সমুদ্র - ইংলিশ চ্যানেল এবং নর্থ সী। এই সাগরই সীমান্ত।
কিন্তু একটি-দুটি ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম আছে। যেমন আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্র এবং উত্তর আয়ারল্যান্ড মিলে একটি আলাদা দ্বীপ।
উত্তর আয়ারল্যান্ড ব্রিটেনের অংশ। আর আইরিশ প্রজাতন্ত্র একটি পৃথক দেশ এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য । এ দুয়ের মধ্যে আছে স্থল সীমান্ত ।তাই ব্রেক্সিটের পর এটিই পরিণত হবে ইউরোপ আর ব্রিটেনের স্থল সীমান্তে।
ব্রিটেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে গেলেই এ সীমান্তে কাস্টমস চৌকি বসাতে হবে।
আয়ারল্যান্ড আর উত্তর আয়ারল্যান্ডের মধ্যে যত মানুষ ও পণ্য এখন মুক্তভাবে চলাচল করে - তখন তা আর থাকবে না।
শত শত ট্রাক-বাসকে এখানে থামতে হবে, কাস্টমস চেকিং-এর জন্য লাইন দিতে হবে, পণ্য চলাচলে অনেক সময় ব্যয় হবে, দিতে হবে শুল্ক।
কিন্তু অন্যদিকে দেখুন - এই দুই আয়ারল্যান্ডের মানুষের ভাষা এক, সংস্কৃতি এক, অনেক পরিবারেরই দুই শাখা দুদিকে বাস করে। ইইউর অংশ হবার কারণে এতদিন সেখানকার লোকেরা মুক্তভাবে একে অন্যের দেশে গিয়ে চাকরি-বাকরি ব্যবসাবাণিজ্য করতেন ।
এই সবকিছুর মধ্যেই তখন নানা বাধার দেয়াল উঠে যাবে।
আরো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, উত্তর আয়ারল্যান্ডে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সহিংস বিদ্রোহের অবসানের জন্য হওয়া গুড ফ্রাইডে চুক্তিতেও আয়ারল্যান্ডের দুই অংশের যোগাযোগ যেভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে - তাও এতে বিপন্ন হতে পারে।
এটা যাতে না হয় - সেজন্যই ব্রেক্সিটের পরের জন্য টেরিজা মে'র পরিকল্পনায় ছিল 'ব্যাকস্টপ' নামে এক ব্যবস্থা।
দুই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগঃ
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ ‘ব্রেক্সিট’ নিয়ে গৃহবিবাদের জের ধরে অবশেষে পদত্যাগ করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। মন্ত্রিসভা ও দলীয় আইনপ্রণেতাদের প্রবল চাপের মুখে পদত্যাগ করেন।
২০১৬ সালের জুন মাসে ব্রেক্সিট গণভোটের পরাজয় মেনে নিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে ক্ষমতায় বসেছিলেন থেরেসা মে। কিন্তু ব্রেক্সিট কার্যকর করতে পারেননি। বরং এ নিয়ে তিনি তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়েন। শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় আসার তিন বছরের মাথায় ব্রেক্সিট গণভোটের রায় বাস্তবায়ন করতে না পারার ব্যর্থতা নিয়ে সরে দাঁড়াচ্ছেন মে। ফলে ব্রেক্সিট ইস্যুতে ডেভিড ক্যামেরনের মতো পরিণতি হয়েছে থেরেসা মেরও।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থেরেসা মে গত তিন বছরের পুরোটাই যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে এক বিচিত্র অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। এ সময় তাঁর মন্ত্রিসভা থেকে ৩৬ জন পদত্যাগ করেন, যাঁদের ২১ জন শুধু ব্রেক্সিট বিরোধের জের ধরে পদত্যাগ করেছেন। দেশটিতে এত অল্প সময়ে এত বেশিসংখ্যক মন্ত্রীর পদত্যাগের ঘটনা আর ঘটেনি। কেবল বিরোধী লেবার দলকে কোণঠাসা করতে ২০১৭ সালে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিয়েছিলেন মে।
ওই নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে মে নিজেই কোণঠাসা হয়ে পড়েন। মাত্র ১০ আসন জেতা উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির সঙ্গে সমঝোতা করে তিনি সরকারে বহাল থাকেন। ওই নির্বাচনই তাঁর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। গত জানুয়ারি মাসে তাঁর উত্থাপিত ব্রেক্সিট চুক্তি ২৩০ ভোটের ব্যবধানে প্রত্যাখ্যাত হয়। এটিও ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সরকারের সবচেয়ে শোচনীয় পরাজয়ের রেকর্ড। এ ছাড়া স্বল্পতম সময়ে বিদায় নেওয়া প্রধানমন্ত্রীদের তালিকার পঞ্চম স্থানে যুক্ত হতে যাচ্ছেন মে।
আবেগঘন বক্তব্যে থেরেসা মে বলেন, ২০১৬ সালের গণভোটে যুক্তরাজ্যের মানুষ যে রায় দিয়েছিলেন, তা কার্যকরে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। এই ‘গভীর বেদনাদায়ক’ ব্যর্থতা তাঁকে বাকি জীবন পীড়া দেবে।
ইইউর সঙ্গে সম্পাদিত বিচ্ছেদ বিলে সমর্থন আদায়ে বিরোধীদের সঙ্গে সমঝোতার সব চেষ্টা করেছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেন, নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যিনিই দায়িত্ব নেন না কেন, পার্লামেন্টে সমঝোতার ভিত্তিতেই ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করতে হবে।
ব্রেক্সিট কার্যকরে থেরেসা মে দীর্ঘ আড়াই বছরের চেষ্টায় ইইউর সঙ্গে একটি বিচ্ছেদ চুক্তি করেছিলেন। কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও তিনি এই চুক্তিতে নিজ দলের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী ও পার্লামেন্টের বিরোধী দলগুলোর সমর্থন নিতে পারেননি। থেরেসা মের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের কাজটি আরও জটিল হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন দেশটির রাজনীতি-বিশ্লেষকেরা।
No comments:
Post a Comment